কড়চা ডেস্ক : মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আরিচা ঘাট। রোববার ভোরের আলো ফোটার আগেই নদীর ধারে জেলেদের আড্ডা জমে উঠেছে। কিন্তু সেদিনের সকালটা ছিল আলাদা—যমুনার বুকে জালের ফাঁদে ধরা পড়েছিল এক মণ ওজনের বাঘাইড় মাছ!
নদীর বুক থেকে উঠে এলো দানব মাছ
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে জাল ফেলেছিলেন সিরাজগঞ্জের কোরবান আলী। প্রতিদিনের মতো মাছ ধরতে গিয়ে হঠাৎ জালে অস্বাভাবিক টান অনুভব করলেন। সঙ্গীদের সাহায্যে যখন জাল টেনে তুললেন, তখন দেখা গেল—বড়সড় দেহ নিয়ে ছটফট করছে এক বিশাল বাঘাইড়। জেলের ভাষায়, “জীবনে অনেক মাছ ধরেছি, কিন্তু এমনটা কখনো দেখিনি।”
আড়তে ভিড়, উল্লাস আর কৌতূহল
রোববার সকালে কোরবান মাছটি নিয়ে আসেন আরিচা ঘাটের মামুনের আড়তে। মাছটি মাটিতে রাখতেই যেন ঘাটজুড়ে ছোটখাটো মেলা বসে গেল।
মানুষ ছুটে আসে নানা দিক থেকে। কেউ মোবাইল তুলে ছবি তোলে, কেউ আবার বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। শিশুদের উচ্ছ্বাস আরও বেশি—“এতো বড় মাছ! মানুষ খেয়ে ফেলবে নাকি?”—এমন প্রশ্নও শোনা যায় ভিড়ের মধ্যে।
টানটান দর কষাকষি
আড়তে উঠতেই শুরু হয় দর কষাকষি। প্রতি কেজিতে দাম ওঠে ১১৫০ টাকা। মুহূর্তেই মাছটির দাম দাঁড়ায় ৪৬ হাজার টাকা। উত্তেজনা বাড়তে থাকে, কে নেবে মাছটি? শেষ পর্যন্ত ঢাকার মাছ ব্যবসায়ী নিতাই ঘোষণা দেন, “মাছটা আমার। এত বড় মাছ ছেড়ে দেব না।”—এবং নগদ অর্থে কিনে নেন বাঘাইড়টিকে।
স্থানীয়দের অনুভূতি
মাছ ব্যবসায়ী মামুনের চোখেমুখে খুশি। তিনি বলেন, “এমন মাছ সচরাচর দেখা যায় না। আমার খোলায় উঠেছে, এটা গর্বের।”
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম আবেগ নিয়ে বলেন, “এখন নদীতে বড় মাছ পাওয়া দুষ্কর। আজকের দিনটা মনে থাকবে অনেক দিন।”
গল্প হয়ে রইল
শিবালয় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাথী রানী নিয়োগী অবশ্য বাস্তবতা মনে করিয়ে দিলেন—“যমুনায় এখনও মাঝে মাঝে বড় বাঘাইড় ধরা পড়ে। তবে মাছ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।”
সেদিন আরিচা ঘাটের আড়তে শুধু মাছ বিক্রি হয়নি, জমে উঠেছিল উৎসবের আমেজ। শিশুদের কৌতূহল, বড়দের বিস্ময়, দর কষাকষির টানটান উত্তেজনা—সব মিলিয়ে এক বিরল সকাল উপহার দিয়েছে এক মণ ওজনের বাঘাইড়। নদীর বুক থেকে উঠে আসা এই দানব মাছ এখন আর শুধু একজন ব্যবসায়ীর সম্পদ নয়, বরং হয়ে উঠেছে পুরো এলাকার স্মৃতির অংশ, গল্পের উপাদান।
কড়চা/ এস বি
















