শুভ জন্মদিন : মধুসূদন সাহা/ ড. দিলীপ কুমার সাহা

শুভ জন্মদিন : মধুসূদন সাহা

ড. দিলীপ কুমার সাহা

আমার ছোট ভগ্নিপতি মধুসূধন সাহা, বয়সে আমার চেয়ে দুই/ তিন বছরের বড়। মানিকগঞ্জ শহরের দাশড়া’র এক বনেদী পরিবারে উনার জন্ম। মানিকগন্জ সরকারি স্কুল ও মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ-এ পড়াশুনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন এর উপর মাস্টার্স সম্পূর্ণ করে। বাবার একমাত্র ছেলে হওয়ার কারণেই, বাবা-মা  দূরে কোথায়ও যেতে হবে ভেবে কোন চাকরিতেই এপ্লিকেশন করতে দেয়নি, সে কারণেই মানিকগঞ্জের তৎকালীন স্বনামধন্য অর্থনীতির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান স্যারের তৎকালীন মানিকগঞ্জে বেশ জনপ্রিয় এনজিও গণ সংস্থায় রিজওনাল ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করেন, যাতে রথ দেখা ও কলা বেচা এক সাথেই হয়। আমি তাঁকে  দেখেছি  এনজিও-র কো-অর্ডিনেটর হিসাবে মানিকগঞ্জ ও আমাদের পাশের জেলা টাংগাইল এর দায়িত্ব পালন করতে, সাথে বাবার ব্যবসাও দেখ ভাল করতে।

আমি যখন দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র  তখন জাসদ ছাত্রলীগ ছিল এতৎঅঞ্চলের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন। যে কয়েকজনের নাম তখন খুবই উচ্চারিত হতো তন্মধ্যে আপেল ভাই, পুলক ভাই, হায়দার ভাই, ইকবাল ভাইসহ আরো অনেকের নাম। তবে নেপথ্যে যার নাম শুনেছি, সে হলো আমার ছোট ভগ্নিপতি, আমার বন্ধুদের কাছে যিনি পরিচিত মধুদা নামে। মানিকগঞ্জে আমার বন্ধুরা আমাকে যখন কারো সাথে পরিচয় করে দেয় বলে আমাদের মধুদার বর কুটুম।

এবার আসি বিয়ে প্রসংগে। দাদার সাথে আমার বোনের যখন বিয়ে হয় তখন আমরা থাকি মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায়  ঝিটকার পাশ্ববর্তী বাল্লা মালুচিতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটেও এখনকার মতো ছিল না। সম্বন্ধ উল্লেখ হলে আমার দাদা (তখন কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বর্তমানে উত্তরা ব্যাংকের এজিএম) দুলাল কুমার সাহা’কে বাবা বললো, তোমার মতামত দাও। আমার বড় ভাই তখন আমার কথা বলে। সে বলে আমি রাজি হলেই হবে। আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। আমি জানি মধুদা রাজনীতি করে, রাজনীতি যারা করে তাঁদের সম্পর্কে সাধারণের পারসেপশন যেমন আমারও তাই, তবে আমার মা রাজনীতি করে বিধায় কিছুটা গড়রাজি থাকলেও সার্বিক বিবেচনায় আমরা সকলেই রাজি হই। বিয়ে ঠিক হয় কিন্ত আমার পরীক্ষা থাকায় আমি বিয়েতে থাকতে না পারলে আমার বাবা তাঁর সাধ্যমত সব কিছু করেছিলেন। তাতে বরপক্ষের লোকজন তথা মধুদার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব খুশি ছিলেন বলেই জেনেছি।

এবার আসি তাঁর পজিটিভ গুণের বিশ্লেষণে। যতদিন দাদা চাকুরিতে ছিলেন কতৃপক্ষসহ তাঁর সাবঅরডিনেটদের সব সময় তাঁর মানবিক গুণাবলীর প্রশংসা করতে শুনেছি। দাদার বাসায় প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ, এর মধ্যে রেয়ার কালেকশনই বেশি। বই পড়ার প্রতিও তার প্রচন্ড অনুরাগ। এ কারণেই সে এত সাবলীলভাবে যে কোন বিষয়কে জীবন্ত করে তুলে। সে ভ্রমণ পিপাসু। সাধ্যমত ঘুরে বেড়ায়নো তাঁর  স্বভাব। সে খুবই সাংসারিক ও গুছানো প্রকৃতির মানুষ, তদূপরি গাছের পরিচর্যা ও আবার সে গাছ মানুষকে দান করা- যা  পরিবেশের প্রতি দাদার সংবেদনশীলতা ও ভালবাসার পরিচয় বহন করে। এ ছাড়াও  গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে দাদার জ্ঞানের ব্যপ্তি সকলের সাথে শেয়ার করে, গাছের ও ফুলের প্রায় সকল ভ্যারাইটি প্রজাতির নাম একজন উদ্ভিবিজ্ঞানীর মতো মুখস্থ। ছাদ বাগান তাঁর প্যাশন; দাদার ছাদ বাগানে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, ফুলজ ও বনজ গাছ, যেখানে মধুদাসহ পরিবারের সকল সদস্য স্বতঃস্ফূর্ত শ্রম দেয়।
শিক্ষকদের দাদা অগাধ সন্মান করে। শিক্ষক দিবসে আমাদের সকলের প্রিয় গুণী পদার্থবিদ শ্রদ্ধেয় সঞ্জীব চৌধুরী স্যারকে যেভাবে আপন তুলিতে রাঙ্গিয়েছিলেন, যা তাঁর মতো সৃজনশীল ও শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল মানুষের পক্ষেই সম্ভব। সে একজন ভাল কলাম লেখক, বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর কলাম আমি নিয়মিত পড়ি এবং জ্ঞানের গভীরতায় ও মুগ্ধতায় ডুবে যাই। আত্মীয়তা ও সামাজিকতার বন্ধন করার মন্ত্র তাঁর মুখস্থ।একজন মানুষ কত বিচক্ষণ হলে মানিকগঞ্জের লক্ষ্মীমন্দিরে সে হঠাৎই সকল বনবন্ধুবান্ধবদের দাওয়াত দিয়ে বেদ কয়েক ঘন্টা ধরে পাঠ করে শুনায় একজন বৈদিক বিশেষজ্ঞের মতো। তবে সার্বিকভাবে যে গুণগুলো আমাকে টেপ্টেটেড করেছে তন্মধ্য দাদার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, অপরের প্রতি ক্ষমা ও মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য ও সহ্য, দয়া ও মমতা, ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য, বিনয় ও নম্রতা এবং অন্যের প্রয়োজন মেটানোর সাধ্যমতো  মনোবৃত্তি, বন্ধু বৎসল, সামাজিক, ভ্রমণ পিপাসু, সৃজনশীল ও পরিবেশবান্ধব। দাদার চরিত্রের সব গুণ সম্পর্কে  ধারণা দেওয়া আমার লেখনিতে একেবারেই অসম্ভব। তবে দাদা এখনও শিশুসুলভ ও কিছুটা ছটফটে।

এবার আসি দাদার ভারতে যাওয়া প্রসংগে। আমি যখন ভারতের পুনেতে পিএইচডি করি, দাদা পরিবারসহ হঠাৎই ভারতে চলে যায়, যার কারণ এখনো আমি জানি না। যে দেশে তাঁর জন্ম যাঁর পূর্বপুরুষ যে মাটিতে ঘুমিয়ে আছে, সব ছেড়ে দাদার মতো সামাজিক ও বন্ধুবৎসল লোক কেন চলে গেলো আজঅব্দি সত্যিই  আমি অধরা। তবে সব কিছু ফেলে মনের কোনে যেন কিসের অশান্তি ও চঞ্চলতা আমি তাঁর মাঝে দেখি, যে কারণে শুধুই বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটাতে হঠাৎ করেই সে চলে আসে, সীমানার সকল বাঁধা পেরিয়ে।

এ বছর হঠাৎই শুনলাম দাদা খুবই অসুস্থ। মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় দুইদিন আইসিওতে থেকে সে ক্রমান্বয়ে সুস্থ হয়ে উঠে; সুস্থ হয়েই তাই কিছুদিনের মধ্যেই স্বভাবসুলভ প্রত্যাশা আবার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে চলে আসে বাংলাদেশে। সত্যিই, আপনার বন্ধুবৎসল  মননকে স্যালূট জানাই।
হয়তো সব সময় খোঁজ নিতে পারি না, তবে আপনি আছেন আমাদের সকলের মণিকোঠায়। আপনার সাথে অনেক অতীতই মনে পড়ছে। সব না হয় আগামীতে আবার হবে।
শুভ জন্মদিন দাদা। সবাইকে নিয়ে ভাল থাকবেন এ প্রার্থনা করি।
ড. দিলীপ কুমার সাহা : প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ।
কড়চা/ ডি কে এস
Facebook Comments Box
ভাগ